ভূমিকম্প যেখানে মানুষ তো বটেই, মানুষের চেয়ে হাজার-লাখ গুণ শক্তিশালী বড় বড় ভবন, গাছপালা ইত্যাদি অনায়াসে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়, সেখানে আলাদাভাবে শুধু শিক্ষার্থীদের কথা উল্লেখ করায় অনেকে অবাক হতে পারেন। কিন্তু এটি সত্য যে, ভূমিকম্প বা যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা– প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয়ভাবেই। ১৮ বছর (কিংবা নিদেনপক্ষে ১৬) বয়সের নিচে সবাইকে যদি শিশু মনে করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, দুর্যোগ ও দুর্যোগ-পরবর্তী ধকলটি শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের ওপর দিয়ে বেশি করে যায়। এ লেখায় নারী ও বৃদ্ধদের কথা আসবে না। যেসব শিশু লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থাৎ যারা শিক্ষার্থী, ভূমিকম্পে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে– ভূমিকম্প ছাড়া। ভূমিকম্প এমন এক দুর্যোগ যা অনেক দিন হয় না, কিন্তু যখন হয় তখন সর্বনাশের চূড়ান্ত করে ছাড়ে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে বড় ভূমিকম্প হয়নি, সুতরাং এ-এলাকায় একটি মাঝারি থেকে বড় ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং সেটি হলে দেশটি শোচনীয়ভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হবে। [১] শুধু বাংলাদেশই নয়, হিমালয় অববাহিকায় একাধিক ভূমিকম্পের কথাও বিভিন্ন গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে এবং যেসব টেকটোনিক সেট-আপ ও প্লেটের নড়াচড়ার কারণে ভূমিকম্প ঘটবে, সেই জোনের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। [২][৩][৪]
সম্প্রতি নেপালের ভূমিকম্প গবেষকদের ধারণা সত্য প্রমাণ করেছে এবং আরও এ রকম বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নেপালের ভূমিকম্পটির ঠিক সপ্তাহখানেক আগে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা নেপালেই বসেছিলেন ভূমিকম্প নিয়ে করণীয় ঠিক করতে, কিন্তু সর্বনাশটি যে এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে তা কেউ ধারণা করতে পারেননি। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, নেপালের বড় আকারের এই ভূমিকম্পের ফলে এ-এলাকায় বড় ভূমিকম্প সাম্প্রতিক সময়ে আর হবে না। অন্যদিকে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভূমিকম্প বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যায় না। সুতরাং এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করাই ভালো।
চিত্র ১: যেসব ফল্টের কারণে বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের কবলে পড়তে পারে [৫]
ভূমিকম্পের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা হচ্ছে, এটি কখন হবে তার কিছুই জানা যায় না। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন, বন্যা, খরা, সাইক্লোন ইত্যাদিতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব, ভূমিকম্পে তেমনটি নয়। এখানে স্বল্পমেয়াদী প্রস্তুতির অপশন কম, নিতে হয় দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি। ভূমিকম্প দিনে হলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা হবে এক রকম, রাতে হলে আরেক রকম। শিক্ষার্থীরা যখন বাড়িতে থাকে, তখন বড় ভূমিকম্প হলে তাদের পিতামাতা সবার আগে ছুটে গিয়ে নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে হলেও সন্তানদের রক্ষা করবেন; কিন্তু তারা যখন বিদ্যালয়ে থাকে, তখন বড় ভূমিকম্প হলে কী করণীয়? বিদ্যালয়ের স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক রক্ষা করবেন কজনকে? আমাদের বিদ্যালয়গুলো কি ভূমিকম্প মোকাবিলায় প্রস্তুত? ভূমিকম্পের সময় ও তার পরের করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা রয়েছে কজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে?
চিত্র ২: মানচিত্রে ভূমিকম্পের জোন হিসেবে বাংলাদেশকে ভাগ করা হয়েছে। লাল জোন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, হলুদ জোনটি মাঝারি ও সবুজ জোনটি কম ঝুঁকিপুর্ণ [৬]
২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে অনুভূত হওয়া ছোট থেকে বড় সব ভূমিকম্পের তালিকা থেকে দেখা যায়, এ-সময়ে দেশে ২৪ বার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ সালে ৬ বার, ২০০৮ সালে ১২ বার, ২০০৯ সালে। আমাদের দেশে একেক বিদ্যালয় একেক সময় শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করে। সুতরাং সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সময় বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই ছয় বছরে বিদ্যালয়-সময়ে ভূমিকম্প হয়েছে মোট পাঁচবার।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার (যেমন, United Nationals International Decade for Natural Disaster Reduction (UNIDNDR) মতে, বাংলাদেশ যে শুধু ভৌগোলিক কারণেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে তা নয়; বরং জনসংখ্যার উচ্চ-ঘনত্ব, দুর্বল অবকাঠামোগত ব্যবস্থা, কম অর্থনৈতিক সক্ষমতা কিংবা দুর্যোগের পর উদ্ধারকাজ প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ইত্যাদি নানা কারণেও দেশটি ভূমিকম্প মোকাবিলার ঝুঁকিতে রয়েছে। Earthquake Disaster Risk Index (EDRI)-এর বিভিন্ন সূচক অনুসারে, বিশ্বের সর্বোচ্চ বিশটি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের মধ্যে ঢাকা একটি।
এসব অবস্থা বিবেচনায় এবং সাম্প্রতিক নেপালের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির কথা মাথায় রেখে দেখা দরকার আমাদের দেশের বিদ্যালয়গুলোর ভূমিকম্প সক্ষমতা কতটুকু। বিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে শিশুরা একটি বড় সময় কাটায় বিদ্যালয়ে এবং ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ ওই সময়ে ঘটলে শিশুদের কীভাবে রক্ষা করতে হবে, তার পরিকল্পনা নেওয়ার সময় হয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত দুর্যোগ মোকাবিলার আলাদা পরিকল্পনা নেই। হঠাৎ ঝড় উঠলে কী করতে হবে, আগুন লাগলে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, ভূমিকম্পে কীভাবে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কোন কাজগুলো করতে হবে— এসব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা হাতেগোণা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাদের কাজের অংশ হিসেবে তাদের কর্মএলাকার বিদ্যালয়গুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য ছোটখাট পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে, কিন্তু তা নিতান্তই অপ্রতুল।
সারণি ১: ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানায় অনুভূত ভূমিকম্পের বর্ণনা [৭]
ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে মূলত চারটি কাজ করতে হয়। এক. ভূমিকম্প হলে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, সে সম্পর্কে বছরে অন্তত দুবার প্রশিক্ষণ ও রিহার্সালের ব্যবস্থা করা। দুই. ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ের করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা করা। তিন. বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিশুর পরিবার ও সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি সদস্যদের মধ্যে এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। চার. বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন যেন ভূমিকম্প-সহনীয় হয়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে ভবনগুলো তৈরি করা।
এই চার করণীয়ের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হল চতুর্থটি; কারণ এর জন্য প্রচুর শ্রম, অর্থ, সময় ও সততার প্রয়োজন। আমাদের দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ের অবস্থাই করুণ। অনেক বিদ্যালয়ে ভাঙাচোরা ভবনে ক্লাস হয় যেগুলো সামান্য ঝড়েই নড়ে। ভূমিকম্পে সেগুলো সবার আগে ভেঙে পড়বে। এমনকি পরিত্যক্ত ভবনেও অনেক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম চলে। অনেক ক্ষেত্রে ইটের তৈরি ভবন থাকলেও সেগুলো সত্যিকার অর্থে কতটুকু মজবুত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।
এডুকেশন ওয়াচ ২০১৩ গবেষণা থেকে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো কী রকম ঠিকঠাক আছে তার একটি ধারণা পাওয়া সম্ভব। নিচের সারণি থেকে দেখা যাচ্ছে, শতভাগ ঠিক আছে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ রকম শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা মাত্র ৪৪ শতাংশ এবং প্রায় ২৭ শতাংশ শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশ অংশ ঠিকঠাক আছে। শ্রেণিকক্ষের অধিকাংশ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত এমন শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা প্রায় ১১ শতাংশ।
উল্লেখ্য, শ্রেণিকক্ষ ঠিকঠাক আছে কিনা, তা নির্ধারণ করা হয়েছে জরিপকারীদের সরাসরি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে। স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো ভূমিকম্প-সহনীয় কিনা তা এ-ধরনের জরিপের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এখানে শুধু বাহ্যিক বিষয় যা সাধারণভাবে দৃশ্যমান সেগুলো বিবেচনা করা হয়েছে। প্রশ্ন হল, যেখানে সাদা চোখে মাত্র ৪৪ শতাংশ শ্রেণিকক্ষকে পুরোপুরি ঠিক মনে হচ্ছে, সেখানে ভূমিকম্প-সহনীয়তার বিচারে সংখ্যাটি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে না?
সারণি ২: বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের অবস্থা [৮]
সুতরাং দেশে যতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, তার ভবনগুলো নির্দিষ্ট মাত্রার ভূমিকম্প-সহনীয় কি-না তা জানা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে ভবন নির্মাণ বা এ ধরনের কাজে দুর্নীতি হয়, এটি মোটামুটি জানা কথা। সুতরাং গত কয়েক বছরে নতুন যেসব ভবন নির্মিত হয়েছে, সেগুলো সত্যিকার অর্থে ভবন নির্মাণের গাইডলাইন অনুসারে নির্মিত হয়েছে কিনা তা দেখা জরুরি। পুরনো ভবনগুলো প্রয়োজনে ভেঙেচুরে ঠিকঠাক করা প্রয়োজন। নেপালের ভূমিকম্পটির পর আগামী ১০ বা ১৫ বছরের মধ্যে যদি এ-এলাকায় এ রকম বড় ভূমিকম্প না হয়, তাহলে আমরা কিন্তু বেশ খানিকটা সময় পাচ্ছি। এই সময়টুকুতে আমাদের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ভবন নিরাপদ করা প্রয়োজন।
তাছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষাকার্যক্রম না চালিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কারণ এ-ধরনের ভবনে দুর্ঘটনার জন্য ভূমিকম্পের প্রয়োজন হয় না, সামান্য ঝড়ো আবহাওয়াই যথেষ্ট হতে পারে। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজে একাধিক পক্ষ জড়িত থাকে। সব পক্ষ থেকে যদি সততার সঙ্গে কাজ করা হয়, তাহলে এই ভবনগুলোই শিশু ও এলাকাবাসীদের আশ্রয়স্থল হতে পারে। অন্তত শিশুদের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টরা শতভাগ সততা ও প্রশ্নহীন দক্ষতা দেখাবেন, এই অনুরোধটুকু করতে চাই।
বাকি তিনটি কাজ তুলনামূলক সহজ। তবে এ জন্য প্রয়োজন সঠিক নির্দেশনা ও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যেহেতু ভূমিকম্প এদেশের নিত্যনৈমিত্তিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, সুতরাং এ-সম্পর্কে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও রিহার্সালের প্রয়োজনীয়তা অনেকের কাছে কম বা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। বিশেষ করে পিতামাতা, গ্রামবাসী এমনকি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়টি কম গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পারে। এ লেখকেরই এমন এক গবেষণায় এ ধরনের ফলাফল উঠে এসেছে। গবেষণাটিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পিতামাতা, গ্রামবাসী সবাইকে ভূমিকম্পের সচেতনতা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দেখা যায়, অধিকাংশই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে চাননি। তাদের অনেকে এও বলেছেন, তাদের জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত বড় ভূমিকম্প হতে দেখেননি। সুতরাং এ নিয়ে এত ভাবার কোনো কারণ নেই। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, ভূমিকম্পের প্রস্তুতির ব্যাপারে আমাদের এক ধরনের উদাসীনতা বা অবহেলা রয়েছে— যেহেতু এটি নৈমিত্তিক দুর্যোগ নয়।
সুতরাং, এ ব্যাপারে সরকারি পর্যায় থেকে যেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, তেমনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ তাদের বার্ষিক পরিকল্পনায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে হবে। ভূমিকম্পের সময়ে এবং ভূমিকম্পের পরে কী কী করতে হয়, তা যদি শিশুদের ভালোভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তারা একদিকে যেমন তাদের পিতামাতাকে সচেতন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি ভূমিকম্প হলে মৃত্যুঝুঁকিও কমানো সম্ভব।
এসব কাজে ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ আশা করা বোকামি। বরং সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় শিক্ষা অফিসসমূহের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় বিদ্যালয় ভবন-সম্পর্কিত জরিপ করতে হবে। তাদের মাধ্যমেই সচেতন করতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এবং তাদের মাধ্যমে তাদের অভিভাবক ও গ্রামবাসীদের। শহর ও গ্রাম এলাকায় ভিন্ন ভিন্নভাবে এই কর্মকাণ্ড চালাতে হবে। মূল দায়িত্ব কিন্তু সরকারের। সরকার যদি স্থানীয় মানুষের সহায়তা নেয়, তাহলে অবশ্যই এলাকাবাসী সহায়তা করতে কুণ্ঠিত হবে না।
বিদ্যালয়ে একেবারে ৪-৫ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা পড়ালেখা করে। অন্তত বয়স ও তাদের মানসিক বিকাশের কথা যদি মাথায় রাখি, তাহলে বিদ্যালয় চলাকালে ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই। নেপালের ভূমিকম্প আমাদের অন্তত এটুকু শিক্ষা দিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো বড় বড় শহরে তো বটেই, গ্রামেও আজকাল আমরা ভবন-কোড না মেনে ইচ্ছেমতো বাড়ি তুলছি। ভূমিকম্পে ঢাকা শহরে যে ক্ষতি হবে, তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। গ্রামে ক্ষতি তুলনামূলক কম হবে হয়তো, কিন্তু তার জন্য প্রস্তুতিতে ঢিল দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিদ্যালয়ের ভবনগুলো একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় সহনীয় করা গেলে একদিকে নিরাপদ থাকা যাবে; অন্যদিকে শিক্ষার্থীসহ অন্যদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে।
তথ্যসূত্র:
[১] Khan, A.A., Hoque, M. Akhter. S.H., & Hoque, M.A. (2001). Earthquake in Bangladesh. A Natural Disaster and Public Awareness. The Journal of Noami.
[২] Bilham, R. (2004). Earthquake in India and the Himalaya: Tectonics, Geodesy and History. Annals of Geophysics, 47, N. 839-858.
[৩] Mukhopadhyay, B., Dasgupta, S. and Dasgupta, S. (2004). Clustering of earthquake events in the Himalaya – Its relevance to regional tectonic set-up. Gondwana Research 7(4): 1242-1247.
[৪] Mullick, M., Riguzzi, F. and Mukhopadhyay, D. (2009). Estimates of motion and strain rates across active faults in the frontal part of eastern Himalays in North Bengal from GPS measurements. Terra Nova 21(5): 410-415.
[৫] এই মানচিত্রটি Syed Humayun Akhter-এর Earthquakes of Dhaka লেখাটি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। সূত্র: http://www.academia.edu/429823/Earthquakes_of_Dhaka
[৬] এই মানচিত্রটি নেয়া হয়েছে Geological survey of Bangladesh (GSB) থেকে।
[৭] http://earthquake.usgs.gov/earthquakes/eqarchives/epic/epic_rect.php ওয়েব সাইট থেকে ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই তারিখে এই টেবিলটি তৈরি করা হয়েছে। টেবিলটি তৈরি করে দিয়েছেন বন্ধু মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।
[৮] Nath, S.R., Roy. G, Rahman, M.H., Ahmed, K.S. and Chowdhury, A.M.R, (2013). New Vision Old Challenges: The State of Pre-primary Education in Bangladesh. Dhaka: Campaign for Popular Education.
* লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ-এর মতামত বিভাগে ১০ মে, ২০১৫ তারিখে।
Leave a Reply